
মালদ্বীপে কাজের সুযোগ ক্রমেই জনপ্রিয় হচ্ছে, বিশেষ করে হসপিটালিটি, কনস্ট্রাকশন, এবং সার্ভিস সেক্টরে দক্ষ ও আধা-দক্ষ কর্মীদের জন্য। ২০২৫ সালে মালদ্বীপ ওয়ার্ক পারমিট ভিসা প্রক্রিয়া আরও সহজ হয়েছে, যাতে বাংলাদেশি কর্মীরাও স্বল্প সময়ে সেখানে গিয়ে চাকরি শুরু করতে পারেন। এখানে আমরা ধাপে ধাপে প্রক্রিয়া, খরচ, শর্ত এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরছি।
মালদ্বীপ ওয়ার্ক পারমিট ভিসার জন্য যোগ্যতা
মালদ্বীপে বৈধভাবে কাজ করতে হলে কিছু বেসিক যোগ্যতা পূরণ করা অত্যাবশ্যক। এই যোগ্যতাগুলি মূলত প্রবাসী কর্মীদের নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য এবং দক্ষতা যাচাইয়ের জন্য নির্ধারিত।
- ন্যূনতম বয়স ১৮ বছর – ১৮ বছরের কম বয়সী কেউ মালদ্বীপে কাজের অনুমতি পায় না। কিছু ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট পদের জন্য ২১ বা তার বেশি বয়সের প্রয়োজন হতে পারে।
- শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকা – মালদ্বীপে কর্মরত হতে হলে ভালো স্বাস্থ্য থাকা জরুরি, কারণ শারীরিক অসুস্থতা বা মানসিক সমস্যার কারণে চাকরিতে সমস্যা হতে পারে।
- বৈধ পাসপোর্ট – পাসপোর্টের মেয়াদ কমপক্ষে ৬ মাস থাকতে হবে, যাতে ভিসার মেয়াদকালে কোনো জটিলতা না হয়।
- শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা – কাজের ধরন অনুযায়ী শিক্ষাগত সনদ ও অভিজ্ঞতার প্রমাণ প্রয়োজন হয়। উদাহরণস্বরূপ, হোটেল ম্যানেজমেন্ট, ইঞ্জিনিয়ারিং বা স্বাস্থ্যসেবায় উচ্চ যোগ্যতার প্রয়োজন হয়।
- অপরাধমূলক রেকর্ড না থাকা – পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেটের মাধ্যমে প্রমাণ করতে হবে যে আপনার বিরুদ্ধে কোনো অপরাধমূলক মামলা নেই।
মালদ্বীপ ওয়ার্ক পারমিট ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
আবেদন করার সময় কিছু নির্দিষ্ট নথি জমা দিতে হয়, যা আবেদনকারীর পরিচয়, যোগ্যতা এবং চাকরির বৈধতা যাচাইয়ের জন্য প্রয়োজনীয়।
- বৈধ পাসপোর্ট – মূল কপি এবং প্রয়োজনে নোটারি কপি জমা দিতে হতে পারে।
- চাকরির অফার লেটার – মালদ্বীপের নিয়োগকর্তা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রদত্ত অফিসিয়াল অফার লেটার।
- মেডিকেল রিপোর্ট – অনুমোদিত মেডিকেল সেন্টার থেকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার সনদ।
- পাসপোর্ট সাইজ ছবি – সাধারণত ২-৪ কপি, সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডে তোলা।
- ভিসা আবেদন ফর্ম – সঠিকভাবে পূরণ ও স্বাক্ষরিত আবেদন ফর্ম।
- পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট – আপনার নিজ দেশের পুলিশ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রদত্ত।
মালদ্বীপ ওয়ার্ক পারমিট ভিসা প্রসেস
২০২৫ সালে মালদ্বীপে ওয়ার্ক পারমিট ভিসার প্রক্রিয়া তুলনামূলক সহজ এবং অনলাইন ভিত্তিক হয়েছে, ফলে আবেদনকারীদের সময় ও খরচ দুটোই সাশ্রয় হচ্ছে।
- চাকরির অফার লেটার সংগ্রহ – প্রথমে মালদ্বীপের কোনো স্বীকৃত কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান থেকে চাকরির প্রস্তাব পেতে হবে।
- প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত – সমস্ত নথি সঠিকভাবে প্রস্তুত ও স্ক্যান করে রাখতে হবে।
- অনলাইনে বা এম্বাসিতে আবেদন – মালদ্বীপের ইমিগ্রেশন ওয়েবসাইট বা নিকটবর্তী এম্বাসিতে গিয়ে আবেদন করা যায়।
- ভিসা অনুমোদন – আবেদন অনুমোদিত হলে ইমেইল বা অফিসিয়াল নোটিফিকেশন পাওয়া যায়।
- এন্ট্রি ভিসা ইস্যু – অনুমোদন পাওয়ার পর মালদ্বীপে প্রবেশের জন্য এন্ট্রি ভিসা ইস্যু করা হয়।
- মালদ্বীপে পৌঁছে ওয়ার্ক পারমিট সংগ্রহ – এন্ট্রি ভিসা নিয়ে মালদ্বীপে পৌঁছানোর পর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ওয়ার্ক পারমিট নিতে হয়।
সাধারণত পুরো প্রক্রিয়াটি ১৫-৩০ দিনের মধ্যে শেষ হয়, তবে কাগজপত্রের ঘাটতি বা যাচাই প্রক্রিয়ার বিলম্ব হলে সময় কিছুটা বাড়তে পারে।
মালদ্বীপ ওয়ার্ক পারমিট ভিসার খরচ
২০২৫ সালে গড়ে মালদ্বীপ ওয়ার্ক পারমিট ভিসার খরচ প্রায় ৳১,২০,০০০ – ৳১,৪০,০০০ হতে পারে (চাকরির ধরন, কোম্পানি ও এজেন্সি সার্ভিস চার্জ ভেদে পার্থক্য হবে)। এর মধ্যে আবেদন ফি, ডকুমেন্ট প্রসেসিং, মেডিকেল, এয়ার টিকেট, এবং সার্ভিস ফি অন্তর্ভুক্ত থাকে।
মালদ্বীপ ওয়ার্ক পারমিট ভিসার মেয়াদ
সাধারণত মালদ্বীপ ওয়ার্ক পারমিটের মেয়াদ ১ বছর হয়, যা চাকরি চলমান থাকলে নবায়ন করা যায়। নবায়ন প্রক্রিয়াটি তুলনামূলকভাবে সহজ এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সঠিকভাবে জমা দিলে দ্রুত অনুমোদন মেলে। অনেক ক্ষেত্রে নিয়োগকর্তা বা কোম্পানি কর্মীদের জন্য ভিসা নবায়নের খরচ বহন করে থাকে, যা কর্মীদের জন্য বড় একটি সুবিধা। এছাড়াও, চাকরির চুক্তি অনুযায়ী কিছু কোম্পানি একসাথে ২ বা ৩ বছরের ভিসার ব্যবস্থাও করে থাকে।
মালদ্বীপ ওয়ার্ক পারমিট ভিসার সুবিধা
মালদ্বীপে ওয়ার্ক পারমিট ভিসা নিয়ে কাজ করার কিছু উল্লেখযোগ্য সুবিধা রয়েছে:
- তুলনামূলকভাবে সহজ ভিসা প্রক্রিয়া, যা অন্যান্য দেশের তুলনায় কম সময়ে সম্পন্ন হয়।
- আকর্ষণীয় বেতন কাঠামো, বিশেষ করে হোটেল, রিসোর্ট ও পর্যটন সংশ্লিষ্ট সেক্টরে।
- অনেক ক্ষেত্রে ফ্রি থাকা ও খাওয়ার সুযোগ, যা ব্যক্তিগত খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে দেয়।
- করমুক্ত আয়, ফলে বেতনের পুরোটা সঞ্চয় বা দেশে পাঠানোর সুযোগ থাকে।
- সুরক্ষিত ও শান্তিপূর্ণ কর্মপরিবেশ, যা প্রবাসী কর্মীদের জন্য নিরাপদ কর্মজীবন নিশ্চিত করে।
- আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ, যা ভবিষ্যতে ক্যারিয়ার উন্নয়নে সহায়ক।
মালদ্বীপ ওয়ার্ক পারমিট ভিসার জন্য চাকরির ধরন
মালদ্বীপে বিভিন্ন ধরণের সেক্টরে বিদেশি কর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়, যেমন:
- হোটেল ও রিসোর্ট স্টাফ (রিসেপশনিস্ট, হাউজকিপিং, ফ্রন্ট ডেস্ক)
- ওয়েটার ও কিচেন হেল্পার
- কনস্ট্রাকশন ও টেকনিক্যাল ওয়ার্কার (ইলেকট্রিশিয়ান, প্লাম্বার, মেসন)
- সিকিউরিটি গার্ড
- ড্রাইভার (হোটেল শাটল, প্রাইভেট ট্রান্সপোর্ট)
- সেলস ও মার্কেটিং স্টাফ
- স্পা ও বিউটি সার্ভিস প্রোভাইডার
- আইটি ও অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সাপোর্ট
মালদ্বীপে জীবনযাত্রা ও খরচ
মালদ্বীপে জীবনযাত্রা তুলনামূলক ব্যয়বহুল হলেও কর্মীদের জন্য কোম্পানির দেওয়া ফ্রি থাকা ও খাওয়ার সুবিধার কারণে ব্যক্তিগত খরচ অনেকটাই কমে যায়। সাধারণত মাসিক ব্যক্তিগত খরচ গড়ে $100-$200 এর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। খাবার, ব্যক্তিগত কেনাকাটা, এবং বিনোদনের খরচ মূলত আপনার ব্যক্তিগত জীবনধারার উপর নির্ভর করে। দ্বীপভিত্তিক জীবনযাত্রা শান্ত ও স্বাচ্ছন্দ্যময় হলেও, পরিবহন খরচ তুলনামূলক বেশি হতে পারে কারণ বেশিরভাগ চলাচল নৌকা বা স্পিডবোটে হয়।
২০২৫ সালে মালদ্বীপে চাকরির সম্ভাবনা
২০২৫ সালে মালদ্বীপে কর্মসংস্থানের সুযোগ আরও বৃদ্ধি পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পর্যটন শিল্পের সম্প্রসারণ, নতুন হোটেল ও রিসোর্ট উদ্বোধন, এবং অবকাঠামো উন্নয়নের কারণে দক্ষ ও অদক্ষ উভয় ধরণের কর্মীদের চাহিদা বেড়েছে। বিশেষ করে হোটেল ম্যানেজমেন্ট, কিচেন স্টাফ, সিকিউরিটি, কনস্ট্রাকশন এবং ড্রাইভিং পদের জন্য বিদেশি কর্মীর চাহিদা বেশি। এছাড়াও স্পা, ডাইভিং ইনস্ট্রাক্টর এবং ট্যুর গাইডদের জন্যও নতুন সুযোগ তৈরি হচ্ছে।