
বাংলাদেশে বিদেশ ভ্রমণ, পড়াশোনা, চিকিৎসা কিংবা চাকরির জন্য বৈধ পাসপোর্ট অত্যাবশ্যক। কিন্তু অনেকেই প্রথমবার পাসপোর্ট করতে গিয়ে বিভ্রান্তিতে পড়ে যান-কোন কোন কাগজপত্র লাগবে, কীভাবে আবেদন করতে হবে, কিংবা কোথায় জমা দিতে হবে। সঠিক তথ্য জানা থাকলে পুরো প্রক্রিয়া অনেক সহজ হয়ে যায়।
এই আর্টিকেলে আমরা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব নতুন পাসপোর্ট করার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, আবেদন করার ধাপ, ফি, পুলিশ ভেরিফিকেশন এবং কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস।
জাতীয় পরিচয়পত্র (NID)
পাসপোর্ট করার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাগজ হলো জাতীয় পরিচয়পত্র। এটি আপনার নাগরিক পরিচয়ের প্রমাণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
জাতীয় পরিচয়পত্রে থাকা নাম, জন্ম তারিখ ও ঠিকানা অবশ্যই পাসপোর্ট ফরমের সঙ্গে মিলে যেতে হবে। সামান্য বানানভুল বা তথ্যের গরমিল থাকলেও আবেদন বাতিল হতে পারে।
যা খেয়াল রাখবেন:
- মূল এনআইডি কার্ড থাকতে হবে।
- তথ্য যেন আবেদন ফরমের সঙ্গে মিলে যায়।
- যদি এনআইডি না থাকে, তবে জন্ম নিবন্ধন ব্যবহার করা যাবে।
জন্ম নিবন্ধন সনদ
যারা এখনও এনআইডি পাননি, বিশেষ করে অপ্রাপ্তবয়স্ক আবেদনকারীদের জন্য জন্ম নিবন্ধন সনদ হলো প্রধান ডকুমেন্ট।
ডিজিটাল জন্ম সনদে এখন ১৭ ডিজিটের ইউনিক আইডি দেওয়া হয়। এই তথ্যের ভিত্তিতেই আপনার জন্ম তারিখ ও পরিচয় যাচাই করা হয়।
প্রয়োজনীয় দিকগুলো:
- অবশ্যই ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধন হতে হবে।
- নাম, পিতার নাম, মাতার নাম ও জন্ম তারিখ অন্যান্য নথির সঙ্গে মিলতে হবে।
- ভুল তথ্য থাকলে আগে সংশোধন করে নিতে হবে।
আবেদন ফরম
পাসপোর্ট করার জন্য এখন আর অফলাইনে ফরম পাওয়া যায় না। আপনাকে অবশ্যই অনলাইনে আবেদন করতে হবে।
অনলাইনে আবেদন করলে প্রক্রিয়া দ্রুত হয় এবং তথ্য সংরক্ষিত থাকে। আবেদন শেষে প্রিন্ট কপি নিয়ে জমা দিতে হয়।
অনলাইন আবেদন প্রক্রিয়া:
- https://www.passport.gov.bd ওয়েবসাইটে প্রবেশ করুন।
- তথ্য সঠিকভাবে পূরণ করুন।
- ছবি ও স্বাক্ষরের জায়গা রেখে প্রিন্ট নিন।
- নির্দিষ্ট ব্যাংকে ফি জমা দিয়ে রসিদ সংযুক্ত করুন।
ছবি
নতুন পাসপোর্টের জন্য নির্দিষ্ট ধরণের ছবি জমা দিতে হয়। এটি আপনার বায়োমেট্রিক প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত থাকে।
ছবি যদি মানসম্মত না হয়, তাহলে আবেদন বাতিল হতে পারে। তাই ছবি তোলার সময় বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হবে।
ছবির নিয়মাবলি:
- সাম্প্রতিক ছবি হতে হবে।
- সাদা ব্যাকগ্রাউন্ড থাকতে হবে।
- এডিট বা ফিল্টার ছাড়া স্পষ্ট ছবি হতে হবে।
- সাধারণত ৪ কপি ছবি জমা দিতে হয়।
জাতীয় পরিচয়পত্র বা অন্যান্য প্রমাণপত্র
অনেক ক্ষেত্রে শুধু এনআইডি যথেষ্ট নয়। আপনার স্ট্যাটাস বা অবস্থান প্রমাণ করতে অতিরিক্ত কাগজপত্রের দরকার হতে পারে।
যে নথিগুলো লাগতে পারে:
- শিক্ষার্থী হলে স্টুডেন্ট আইডি কার্ড।
- চাকরিজীবী হলে অফিস থেকে প্রত্যয়নপত্র।
- বিবাহিত হলে বিবাহ নিবন্ধন সনদ।
- তালাকপ্রাপ্ত হলে তালাকনামা।
এই নথিগুলো আবেদনকে আরও নির্ভরযোগ্য করে তোলে।
পুলিশ ভেরিফিকেশন
নতুন পাসপোর্ট ইস্যুর আগে আবেদনকারীর তথ্য যাচাইয়ের জন্য পুলিশ ভেরিফিকেশন করা হয়। এটি আবেদন প্রক্রিয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।
পুলিশ সাধারণত আপনার স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানায় গিয়ে যাচাই করে। যদি দেওয়া তথ্য সঠিক হয়, তবে ভেরিফিকেশন দ্রুত সম্পন্ন হয়।
যা খেয়াল রাখতে হবে:
- সঠিক ঠিকানা উল্লেখ করতে হবে।
- প্রতিবেশীদের কাছে তথ্য ভিন্ন হলে জটিলতা তৈরি হতে পারে।
- ভেরিফিকেশনের সময় বাড়িতে উপস্থিত থাকার চেষ্টা করুন।
পাসপোর্ট ফি ও জমা দেওয়ার নিয়ম
পাসপোর্ট করার জন্য নির্ধারিত সরকারি ফি রয়েছে। এটি নির্ভর করে আপনি কত দ্রুত পাসপোর্ট পেতে চান তার ওপর।
বর্তমান ফি:
- সাধারণ (Regular): প্রায় ৩,৪৫০ টাকা
- জরুরি (Express): প্রায় ৬,৯০০ টাকা
- সুপার এক্সপ্রেস: প্রায় ১২,৬৫০ টাকা
জমা দেওয়ার নিয়ম:
- নির্দিষ্ট ব্যাংকে ফি জমা দিতে হবে।
- ফি জমার রসিদ আবেদন ফরমের সঙ্গে সংযুক্ত করতে হবে।
অনলাইন আবেদন করার সুবিধা
বর্তমানে পাসপোর্ট আবেদন সম্পূর্ণ অনলাইনে করা যায়, যা সময় ও ঝামেলা অনেক কমিয়ে দেয়।
সুবিধা:
- ঘরে বসেই আবেদন করা যায়।
- তথ্য সংরক্ষিত থাকে।
- ভুল কম হয়।
- আবেদন প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন হয়।
নতুন পাসপোর্ট করার ধাপসমূহ
পাসপোর্ট করার সময় ধাপে ধাপে পুরো প্রক্রিয়াটি অনুসরণ করতে হবে।
ধাপগুলো হলো: ১. অনলাইনে আবেদন ফরম পূরণ ও প্রিন্ট করা। ২. নির্ধারিত ব্যাংকে ফি জমা দেওয়া। ৩. প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করা। ৪. পাসপোর্ট অফিসে বায়োমেট্রিক সম্পন্ন করা। ৫. পুলিশ ভেরিফিকেশন শেষ করা। ৬. নির্ধারিত সময়ে পাসপোর্ট সংগ্রহ করা।
সাধারণ ভুল ও সমাধান
পাসপোর্ট আবেদন করার সময় কিছু সাধারণ ভুল অনেককে সমস্যায় ফেলে দেয়।
সাধারণ ভুলগুলো:
- এনআইডি ও ফরমে বানান গরমিল।
- ঠিকানা ভুল লেখা।
- ছবি অনুপযুক্ত হওয়া।
- সময়ক্ষেপণ করে শেষ মুহূর্তে আবেদন করা।
সমাধান:
- আবেদন ফরম সাবধানে পূরণ করুন।
- ঠিকানা সঠিকভাবে যাচাই করুন।
- ছবি নিয়ম মেনে তুলুন।
- যথাসময়ে আবেদন করুন।
উপসংহার
একটি বৈধ পাসপোর্ট শুধু বিদেশ ভ্রমণ নয়, বর্তমানে অনেক জায়গায় জাতীয় পরিচয়ের জন্যও ব্যবহৃত হয়। তাই নতুন পাসপোর্ট করার সময় সঠিক কাগজপত্র ও তথ্য প্রদান অত্যন্ত জরুরি।
যদি আবেদন প্রক্রিয়া জটিল মনে হয়, তবে আপনার নির্ভরযোগ্য সহায়তাকারী হিসেবে ফ্লাইওয়ে ট্রাভেল সবসময় প্রস্তুত আছে।