ওমরাহ ইসলামের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিধান। আপনার সামর্থ্য থাকলে আপনি যেকোনো সময় ওমরা করতে পারবেন। ওমর করার জন্য নির্দিষ্ট নিয়ম কানুন রয়েছে এগুলো পালন করা বাধ্যতামূলক। সঠিক নিয়মে ওমরা না করলে ওমরা পালন হবে না। যাইহোক আপনি যদি সঠিক নিয়মে ওমরা পালন করতে চান তাহলে নিম্ন বর্ণিত তথ্য গুলো মনোযোগের সাথে পড়ুন নিচে ওমরা পালন করার সঠিক পদ্ধতি বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
ওমরাহ এর কাজসমূহ
ওমরাহ করার জন্য নির্দিষ্ট কাজ রয়েছে। এই কাজগুলো যদি আপনি যথাযথভাবে করতে পারেন তাহলে আমরা সঠিকভাবে আদায় হবে। পক্ষান্তরে নিম্ন বর্ণিত কাজগুলো সঠিকভাবে আদায় না করলে, আমরা পালন হবে না। যাই হোক চলুন দেখে নেয়া যাক, ওমরাহ এর কাজসমূহ।
(১)
দেশথেকে যাবার পরে মিকাতে দিয়ে হাতের,পায়ের নক, অবঞ্চিত লোম যদি থাকে কেটে,চুল কেটে ফেলতে হবে এর পরে উত্তমরূপে গোসল করতে হবে।সেলাই ছাড়া এহরামের কাপড় পরে ওমরাহ এর নিয়ত করবেন।(যদি চায় দেশে এয়ারপোর্টে বসে নিয়ত করতে পাড়বে আর না হয় বিমানে বসে এলার্ম যখন করবে যে আমরা মিকাত অতিক্রম করছি তখন করলেও হবে)
(২)
তাকবির পড়তে হবে, (লাব্বাইকা আল্লা-হুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান্নিমাতা লাকা ওয়ালমুল্ক, লা শারিকা লাক।’)
পুরুষেরা শব্দ করে,মহিলারা মনে মনে।
(৩)
যখন মক্কায় যাবেন হারামের কাছাকাছি যাওয়ার পর কাবা শরীফ দেখার পূর্ব পর্যন্ত তালবিয়া পড়তে থাকতে হবে(লাব্বাইকা আল্লা-হুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান্নিমাতা লাকা ওয়ালমুল্ক, লা শারিকা লাক।’)
মসজিদে প্রবেশের সময় সুন্নাহগুলে আদায় করতে হবে, এর পরে যখন ভিতরে ডুকবেন তখন তাওয়াফ করা শুরু করবেন।
- ৭ টি চক্কর দিবেন(ক্বাবা ঘরের হাজারে আসওয়াদ কে বাম পাশে রেখে ডানপাশে সবুজ বাতিগুলেকে রেখে বিসমিল্লাহি আল্লাহুআকবার বলে তাওয়াফ শুরু করবেন।
- প্রত্যেক চক্করে আলাদা কোন দোয়া নেই তবে প্রত্যেক চক্করে দোয়া কবুল হয়।
- তবে হাজারে আসওয়াদ ও এর আগের কোনা এটিকে রুকনিয়া কোনা বলে এর মধ্যে একটি দোয়া আছে সেটি হল(রাব্বানা আতিনিয়া ফিদদুনিয়া হাসানা অবিল আখিরাতে হাসান ওয়াবিল আজাবান্নার)
- যেহেতু এটি ১ম তাওয়াফ তাই পুরুষেরা এহরামের কাপড় ডান পাশের বোগলের নিচ থেকে নিয়ে বামপাশের কাদের উপর ফেলবেন।
১ম তাওয়াফ কয়তি (৩টি)একটু জোরে দিবেন এর পরের তাওয়াফ একটু স্বাভাবিক দিবেন।
- প্রত্যেক তাওয়াফের সময় হাজরে আসওয়াদ পাথরের কাছে আসলে হাতদিয়ে ইশারা দিয়ে আল্লাহুআকবার বলবেন।
- তাওয়াফ শেষ হলে মাকাবে ইব্রাহীমকে সামনে রেখে অথবা ক্বাবার যে কোন পাশে বসে ২ রাকাত সালাত আদায় করবেন।
- ১ম রাকাতে সূরা কাফিরূন
- ২য় রাকাতে সূরা ইখলাস
- এর পূর্বে যদি সম্ভব হয় তবে ক্বাবা ঘরের চারপাশে যে চৌকাঠ তা ধরে আল্লাহর কাছে দোয়া করবেন।
তার পরে যমযমের পানি পান করে আপনি সাফায় মারওয়া সায়ী করবেন। প্রথমে সাফয়া যাবেন এর পরে দোয়া পরবেন (ইন্নাস সাফা ওয়াল মারওয়াতা মিং শাআয়িরিল্লাহি ফামান হাজ্জাল বাইতা আয়ি’তামারা ফালা ঝুনাহা আলাইহি আঁইয়্যাতত্বাওয়াফা বিহিমা ওয়া মাং তাত্বাওওয়াআ খাইরান ফাইন্নাল্লাহা শাকেরুন আলিম।’)
এরপরে সাফয়া পাহাড়ে দাড়িয়ে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্দাহু লা শারিকালাহু লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হাম্দু ইউহয়ি ওয়া ইউমিতু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদির। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্দাহু আনজাযা ওয়াহদাহু ওয়া নাসারা আবদাহু হাযাামাল আহযাবা ওয়াহদাহু,,দোয়া পড়বেন, এরপরে লা ইলাহা ইল্লাহু ওহদাহু লাশারীকালাহু লাহুল মুলকু ওলাহুল হামদী ওয়হুয়া আলা কুল্লি শায়য়ীন কদীর।
এর পরে কেবলার দিকে ২ হাত ফিরিয়ে মন খুলে দোয়া করবেন।এরপরে আরবিতে না পারলেও বাংলায় বলতে হবে আল্লাহ সাফার নামা আমি এখান থেকে শুরু করছি ,তারপরে সায়ী করা শুরু করছি।
এর পরে হেটে যাবেন মারওয়ায়। মারওয়ায় যেতে মাঝখানে ২টা সবুজ বাতি ঐখানে পুরুষ একটু জোরে হাটবেন। এবং সায়ী সময় জিকির করতে পারেন।
আবশ্যই তাওয়াফের সময় ওযু থাকতে হবে।সায়ীর সময় ওযু না থাকলেও সমস্যা নাই। যদি তাওয়াফের সময় ওযু নষ্ট হয়ে যায় তবে ওযু করে যেখান থেকে ওযু নষ্ট হয়েছিল সেখান থেকে তাওয়াফ শুরু করলেই হবে।
মারওয়া পাহারে গিয়ে কাবার দিকে হাত তুলে দোয়া করতে হবে মনখুলে আর সাফায় পাহারে গিয়ে যা করেছেন মারওয়াতেও সেই কাজ ও দোয়া করতে হবে। এর পরে আবার সারওয়া আবার মারওয়া এভাবে ৭ বার করতে হবে।অতঃপর ওমরাহ সম্পূর্ণ হবে।
পুরুষেরা এর পরে মাথা নারা করতে হবে অথবা ছোট করতে হবে ২/৪ টা চুল ছোট করলে হবে না।
মহিলারা তাদের চুল সামান্য ছোট করলেই হবে। তাদের এহরাম হলো অতিরিক্ত সাজসজ্জা করবে না,মুকের উপর যদি ওরনা দিয়ে থাকে যদি পুরুষ থাকে তবে সেটি যেন বাদা না থাকে আর স্বাভাবিক পোশাক পরবে। আর এহারাম অবস্থাতে সেলাই ছাড়া কাপড় পরবে শুধু, সুগন্ধি ব্যবহার করবে না,মাথায় টুপি রাখবে না, কাপড় ছাড়া অন্য কোন কিছু পড়বে না।কোন পশু পাখি কিংবা মশাও মারবে না।
ইহরাম সম্পর্কিত প্রশ্নোত্তর
ইহরামের কাপড় পরিধানের পূর্বে পরিচ্ছন্নতার জন্য কি কি কাজ করা মুস্তাহাব?
নখ কাটা, গোফ খাট করা, বোগল ও নাভির নীচের চুল কামানো ও তা পরিষ্কার করা। তবে ইহরামের পূর্বে পুরুষ ও মহিলাদের মাথার চুল কাটার বিষয়ে কোন বিধান পাওয়া যায় না। উল্লেখ্য যে, দাড়ি কোন অবস্থায়ই কাটা যাবে না। নখ-চুল কাটার পর গোসল করাও মুস্তাহাব।
وُقِّتَ لَنَا فِي قَصِّ الشَّارِبِ وَتَقْلِيمِ الأَظْفَارِ وَنَتْفِ الإبِطِ وَحَلْقِ الْعَانَةِ أَنْ لاَ نَتْرُكَ أَكْثَرَ مِنْ أَرْبَعِينَ لَيْلَةً
গোঁফ ছোট করা, নখ কাটা, বগল পরিষ্কার করা এবং নাভির নীচের লোম পরিষ্কার করার কাজগুলোকে ৪০ রাতের বেশি সময় অতিক্রম না করার জন্য আমাদেরকে সময় নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে। (মুসলিম ২৫৮)
ইহরামের কাপড় পরিধানের পূর্বে সুগন্ধি মাখা মুস্তাহাব। কিন্তু এ সুগন্ধি কোথায় মাখতে হবে?
মাথায়, দাড়িতে ও সারা শরীরে মাখা যায়। ইহরাম পরিধানের পর যদি এর সুগন্ধ শরীরে থেকে যায় তাতে কোন অসুবিধা নেই। মনে রাখতে হবে, মেয়েরা সুগন্ধি লাগাবে না।
পুরুষের ইহরামের কাপড় কেমন হতে হবে?
চাদরের মত দু’টুকরা কাপড় একটি নীচে পরবে। দ্বিতীয়টি গায়ে দিবে। কাপড়গুলো সেলাইবিহীন হতে হবে। পরিচ্ছন্ন ও সাদা রং হওয়া মুস্তাহাব। ৩য় আর কোন প্রকার কাপড় গায়ে রাখা যাবে না। যেমন টুপি, গেঞ্জি, জাইঙ্গা বা তাবীজ কিছুই না। তবে শীত নিবারণের জন্য চাদর ও কম্বল ব্যবহার করতে পারবে।
মেয়েদের ইহরামের কাপড় কী ধরনের হওয়া চাই?
মেয়েদের ইহরামের জন্য বিশেষ কোন পোষাক নেই। মেয়েরা সাধারণত : যে কাপড় পরে থাকে সেটাই তাদের ইহরাম। তারা নিজ ইচ্ছা মোতাবেক ঢিলেঢালা ও শালীন পোষাক পরবে। তবে যেন পুরুষের পোষাকের মত না হয়। এটা কাল, সবুজ বা অন্য যে কোন রঙের হতে পারে।
ইহরামের ওয়াজিব কয়টি ও কী কী?
৩টি যথা :
- মীকাত থেকে ইহরাম বাঁধা।
- সেলাইবিহীন কাপড় পরিধান করা।
- তালবিয়াহ পাঠ করা। অর্থাৎ নিয়ত করার পর তালবিয়াহ পাঠ করা ওয়াজিব।
ইহরাম অবস্থায় মেয়েরা কি মুখ ঢেকে রাখতে (নিকাব পরতে) ও হাত মোজা (কুফ্ফাযাইন) পরতে পারবে?
না। নিকাব ও হাতমোজা এ অবস্থায় পরবে না। তবে ভিন্ন পুরুষ সামনে এলে মুখ আড়াল করে রাখবে। অর্থাৎ নিকাব ছাড়া ওড়না বা অন্য কোন কাপড় দ্বারা মুখমণ্ডল ঢাকার অনুমতি আছে।
ইহরামের সময় হায়েয-নেফাসওয়ালী মেয়েরা কি করবে?
তারা পরিচ্ছন্ন হবে, গোসল করবে, ইহরাম পরবে। কিন্তু হায়েয-নেফাস অবস্থায় নামায পড়বে না এবং কাবাঘর তাওয়াফ করবে না। বাকী অন্যসব কাজ করবে। এরপর যখন পবিত্র হবে তখন অজু-গোসল করে তাওয়াফ ও সাঈ করবে। যদি ইহরামের পর হায়েয শুরু হয় তখনো কাবা তাওয়াফ করবে না যতক্ষণ পবিত্র না হয়।
ইহরাম অবস্থায় পায়ে কী পরবে?
পায়ের গোড়ালী ঢেকে রাখে এমন কোন জুতা পরা যাবে না। কাপড়ের মোজাও পরবে না। তবে সেন্ডেল পরতে পারে।
বাংলাদেশ থেকে গমনকারী লোকেরা যদি নিজ বাড়ী বা ঢাকা এয়ারপোর্ট থেকে ইহরাম পরে তবে কি তা জায়েয?
হ্যাঁ, তা জায়েয আছে। ইহরামের কাপড় মীকাত থেকে পরা সুন্নাত হলেও বিমান বা যানবাহনে উঠার আগেই গোসল করে ইহরামের কাপড় পরে নিতে পারেন। তবে নিয়ত করা উচিত মীকাতে পৌঁছে বা এর পূর্বক্ষণে। কারণ, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মীকাতে পৌছার আগে নিয়ত করতেন না। কাজেই মীকাতে পৌছার আগে নিয়তও করবে না এবং তালবিয়াহ পাঠও শুরু করবে না।
বিভিন্ন এয়ারলাইনসে ট্রানজিট পেসেন্জার হিসেবে যারা আবুধাবী, দুবাই, কুয়েত, দুহা, বাহরাইন, মাসকাট ও সানআ এয়ারপোর্টে নামবেন তারা সেখানেও পরিচ্ছন্নতা ও অজু-গোসলের কাজ সেরে ইহরামের কাপড় পরে নিতে পারেন। এরপর বিমানে যখন মীকাতে পৌঁছার ঘোষণা দেবে তখনই নিয়ত করে নেবেন এবং তালবিয়াহ পাঠ শুরু করবেন। তবে ঘোষণা দেয়ার সঙ্গেই নিয়ত করে ফেলবেন। কারণ বিমান খুবই দ্রুত চলে। আপনার নিয়ত করা যেন মীকাতে পৌঁছার আগেই হয়ে যায়। তা না হলে দম দিতে হবে।
নিয়ত কীভাবে করতে হয়?
নামাযসহ অন্যান্য সকল ইবাদাতের নিয়ত করতে হয় মনে ইচ্ছা পোষণ করে। তবে ইহরামের সময় মুখে শুধু হজ্জ বা উমরা শব্দ উচ্চারণ করতে হয়।
উমরা ও হজ্জের ক্ষেত্রে কি শব্দ বা বাক্য উচ্চারণ করতে হয়?
- উমরার সময় বলবেন- لَبَّيْكَ عُمْرَةً অথবা বলবেন, اَللَّهُمَّ لَبَّيْكَ عُمْرَةً
- হজ্জের সময় : لَبَّيْكَ حَجًّا অথবা বলবেন, اَللَّهُمَّ لَبَّيْكَ حَجًّا।
- উমরা ও হজ্জ একত্রে করলে বলবেন- لَبَّيْكَ حَجًّا وَعُمْرَةً।
- বদলী হজ্জের সময় ‘লাব্বইকা …’ পক্ষ থেকে। لَبَّيْكَ عَنْ (فلان)
যারা প্রথমে উমরা করবেন এবং ৮ই যিলহজ্জ তারিখে হজ্জ করবেন তারা মীকাত থেকে শুধুমাত্র উমরার নিয়ত করবেন। উমরা ও হজ্জের নিয়ত একত্রে করবেন না। নিয়ত শেষ হওয়ামাত্র কোন কাজটি করতে হবে। তালবিয়াহ পাঠ শুরু করবেন, আর তা- বেশী বেশী পড়বেন। উচ্চস্বরে পড়বেন।
তবে মেয়েরা পড়বে নীচু স্বরে, যাতে সে কেবল নিজে শুনতে পায়। বেশী বেশী যিক্র আয্কার করতে থাকবে। কিবলামুখী হয়ে তালবিয়াহ পড়া উত্তম, তাছাড়া উচু থেকে নীচে নামা ও নিচু থেকে উঁচু স্থানে উঠার সময়ও তালবিয়াহ পাঠ করা সুন্নাত।
তালবিয়ার বাক্যটি কেমন?
তালবিয়ার বাক্যটি নিম্নরূপ :
لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ – لَبَّيْكَ لاَ شَرِيكَ لَكَ لَبَّيْكَ ু إِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ – لاَ شَرِيكَ لَكَ
অর্থ : হাজির হয়েছি হে আল্লাহ! তোমার ডাকে সাড়া দিয়ে আমি হাজির হয়েছি। আমি হাজির হয়ে সাক্ষ্য দিচ্ছি তোমার কোন শরীক নাই, আমি হাজির। নিশ্চয়ই সমস্ত প্রশংসা ও নেয়ামাত তোমারই এবং রাজত্বও। তোমার কোন শরীক নেই।
لَبَّيْكَ = হাজির হয়েছি, اللَّهُمَّ = হে আল্লাহ, لاَ شَرِيكَ=কোন শরীক নাই, لَكَ=তোমার إِنَّ=নিশ্চয়, الْحَمْدَ=সকল প্রশংসা, النِّعْمَةَ=নেয়ামত, الْمُلْكَ=রাজত্ব।
তালবিয়াহ পাঠ কখন শুরু করব এবং কখন শেষ করব?
ইহরামের কাপড় পরার পর যখনই নিয়ত করা শেষ করবেন তখন থেকে তালবিয়াহ পাঠ শুরু করবেন, আর শেষ করবেন হারাম শরীফে পৌঁছে তাওয়াফ শুরুর পূর্বক্ষণে। আর হজ্জের বেলায় ১০ই যিলহজ্জে বড় জামরায় কংকর নিক্ষেপের পূর্ব পর্যন্ত তালবিয়াহ পাঠ করতে থাকবেন।
কখনো কখনো কিছু লোককে দল বেঁধে সমস্বরে তালবিয়াহ পড়তে দেখা যায়। এর হুকুম কী?
এটি ঠিক নয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কিরাম এমনটি করেননি। উলামায়ে কিরাম এটিকে বিদআত বলেছেন। বিশুদ্ধ হলো একাকী নিজে নিজে তালবিয়াহ পাঠ করা।
তালবিয়াহ পড়লে কি সওয়াব হয়?
হাদীসে আছে
তালবিয়াহ পাঠকারীর সাথে তার ডান ও বামের গাছপালা এবং পাথরগুলোও তালবিয়াহ পড়তে থাকে।
তালবিয়াহ পাঠকারীকে আল্লাহর পক্ষ থেকে জান্নাতের সুসংবাদ দেয়া হয়।
ইহরাম পরে যে দু’রাকাত নামায পড়া হয় তা কি উমরা বা হজ্জের নিয়তে? নাকি তাহিয়াতুল অজুর নিয়তে?
ঐ দু’রাকাত নামায তাহিয়াতুল অজুর নিয়তে পড়বেন। আর ফরয নামায আদায়ের পর হলে স্বতন্ত্র আর কোন নামায পড়তে হবে না।
ইহরাম অবস্থায় কি কি কাজ নিষিদ্ধ?
নিষিদ্ধ কাজগুলো নিম্নরূপ :
- চুল উঠানো বা কাটা, হাত ও পায়ের নখ কাটা। তবে শরীর চুলকানোর সময় ভুলে বা অজ্ঞাতসারে যদি কিছু চুল পড়ে যায় তাতে অসুবিধা নেই।
- ইহরাম বাঁধার পর সুগন্ধি ব্যবহার করা যাবে না।
- স্ত্রী সহবাস, যৌনক্রিয়া বা উত্তেজনার সাথে স্ত্রীর দিকে তাকানো, তাকে স্পর্শ করা, চুম্বন করা, মর্দন ও আলিঙ্গন করা বা এ জাতীয় কথা বলা নিষেধ।
- বিবাহ করা বা দেয়া, এমনকি প্রস্তাব দেওয়াও নিষেধ। চাই নিজের বা অন্যের হোক, উভয়ই নিষেধ।
- স্থলজ প্রাণী শিকার করা বা হত্যা করা নিষিদ্ধ। এতে সহযোগিতা করবেন না। কিন্তু পানির মাছ ধরতে পারবেন। হারামের সীমানার ভিতর প্রাণী শিকার করা ইহরাম বিহীন লোকদের জন্যও নিষেধ।
- সেলাইযুক্ত কাপড় পরা, এটা করা যাবে না। তবে ঘড়ি, আংটি, চশমা, কানের শ্রবণ যন্ত্র, বেল্ট, মানিব্যাগ ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারবেন।
- মেয়েরা সেলাইযুক্ত কাপড় পরতে পারবে।
- মাথা ঢেকে রাখা নিষেধ। মুখও ঢাকবে না। ইহরামের কাপড়, পাগড়ী, টুপি তোয়ালে, গামছা বা অন্য কোন কাপড় দিয়েও মাথা ঢেকে রাখা যাবে না। তবে ছাতা, তাবু, গাড়ীর বা ঘরের ছাদের ছায়ার নীচে বসতে পারবেন। ভুলে বা অজ্ঞাতসারে যদি মাথা ঢেকে ফেলে তবে স্মরণ হওয়া মাত্র তা সরিয়ে ফেলতে হবে। মেয়েরা মাথা ঢেকে রাখবে।
- মহিলারা হাত মোজা পরবে না। নিকাব দিয়ে মুখ ঢাকবে না। পর্দার প্রয়োজন হলে উড়না দিয়ে ঢাকবে।
- ঝগড়া-ঝাটি করবে না।
- ইহরাম অবস্থায় থাকুক বা না থাকুক মক্কা শরীফের হারামের সীমানার ভিতরে কেউ এমনিতেই গজিয়ে উঠা কোন গাছ বা সবুজ বৃক্ষলতা কাটতে পারবে না।
ইহরাম অবস্থায় যেসব কাজ নিষেধ এর কোন একটা কাজ যদি ভুলে বা না জেনে করে ফেলে তাহলে কী করতে হবে?
এ জন্য কোন দম বা ফিদইয়া দিতে হবে না। স্মরণ হওয়া মাত্র বা অবগত হওয়ার সাথে সাথে এ কাজ থেকে বিরত হয়ে যাবে এবং এজন্য ইস্তেগফার করবে। তবে যৌনক্রিয়ায় লিপ্ত হলে হজ্জ বাতিল হয়ে যাবে।
কিন্তু উযর বশতঃ একান্ত বাধ্য হয়ে যদি ইচ্ছাকৃতভাবে মাথার চুল উঠায় বা কেটে ফেলে তাহলে কী করতে হবে?
ফিদইয়া দিতে হবে। আর এর পরিমাণ হলোঃ একটি ছাগল জবাই করে গোশত বিলিয়ে দেয়া, অথবা
لكل مسكين نصف صاعةছয়জন মিসকিনকে এক বেলা খানা খাওয়াতে হবে, (প্রত্যেককে এক কেজি বিশ গ্রাম পরিমাণ) অথবা তিনদিন রোযা রাখবে। উলামায়ে কিরামের কিয়াস অনুসারে মাথা ছাড়া অন্য অংশ থেকে চুল উঠালে বা কাটলে অথবা নখ কাটলে উপরে বর্ণিত ফিদইয়া কার্যকরী হবে।
ইহরামরত অবস্থায় কি কি কাজ বৈধ?
নিম্ন বর্ণিত কাজগুলো বৈধঃ
- গোসল করতে পারবে। পরনের ইহরামের কাপড় বদলিয়ে আরেক জোড়া ইহরাম পরতে পারবে, ময়লা হলে কাপড় ধৌত করা যাবে।
- ইহরাম অবস্থায় শিঙ্গা লাগানো, ফোঁড়া গালানো, দাঁত উঠানো ও অপারেশন করা যাবে।
- মোরগ, ছাগল, গরু, উট ইত্যাদি জবাই করতে পারবে এবং পানিতে মাছ ধরতে পারবে।
- মানুষের জন্য ক্ষতিকারক প্রাণী যেমন : কুকুর, চিল, কাক, ইঁদুর, সাপ, বিচ্ছু, মশা, মাছি ও পিঁপড়া মারা যাবে। خَمْسٌ مِنْ الدَّوَابِّ لاَ جُنَاحَ فِي قَتْلِهِنَّ عَلَى مَنْ قَتَلَهُنَّ فِي الْحَرَمِ وَالإِحْرَامِ الْفَأْرَةُ وَالْحِدَأَةُ وَالْغُرَابُ وَالْعَقْرَبُ وَالْكَلْبُ الْعَقُورُ (নাসাঈ ২৮৩৫)
- পাঁচ ধরনের প্রাণীকে হারামে ইহরাম অবস্থায় হত্যা করলে হত্যাকারীর কোন গুনাহ হবে না। সেগুলো হল : ইদুর, চিল, কাক, বিচ্ছু ও হিংস্র কুকুর।
- প্রয়োজন হলে আস্তে আস্তে শরীর চুলকানো যাবে।
- বেল্ট, আংটি, ঘড়ি, চশমা পরতে পারবে।
- যেকোন ছায়ার নীচে বসতে পারবে।
- সুগন্ধযুক্ত না হলে সুরমা ব্যবহার করা যাবে।
- মেয়েরা সেলাইযুক্ত কাপড় পরতে পারবে এবং অলংকারও ব্যবহার করতে পারবে।
- ইহরাম অবস্থায় পুরুষেরাও ছোটখাট সেলাই কাজ করতে পারবে।
- কোমরের বেল্টে টাকাপয়সা ও কাগজপত্র রাখতে পারবে।
- ডাকাত বা ছিনতাইকারী দ্বারা আক্রান্ত হলে আত্মরক্ষার্থে আক্রমণকারীকে হত্যাও করা যাবে। আর নিজে নিহত হলে শহীদ হবে। এ উদ্দেশ্যে অস্ত্রও বহন করা যাবে।
- ইহরাম অবস্থায় স্বপ্নদোষ হলে ইহরামের কোন ক্ষতি হয় না।
সুগন্ধিযুক্ত সাবান দিয়ে ইহরাম অবস্থায় হাত বা শরীর ধৌত করতে পারবে কি?
না, সুগন্ধওয়ালা সাবান দিয়ে গোসল করা জায়েয নয়, এমনকি হাতও ধুইবে না।
কোন মুহরিম ব্যক্তি যদি অনুভব করে যে, তার থেকে প্রসাবের ফোটা বা মযী বের হয়েছে তখন কি করবে?
তখন ইস্তিনজা করে ঐ অংশটি ধুয়ে পরিষ্কার করে নেবে। আর সালাতের ওয়াক্ত হলে অজু করে সালাত আদায় করবে।
ইহরাম পরা অবস্থায় স্বপ্নদোষ হলে কি করতে হবে?
এমনটি ঘটলে ফরয গোসল করে নেবে এবং কাপড় ধুয়ে ফেলবে। এতে হজ্জ বা উমরার কোন ক্ষতি হবে না। এমনকি ফিদইয়াও দিতে হবে না। কারণ স্বপ্নদোষ মানুষের ইচ্ছাধীন কোন ঘটনা নয়।
অযু-গোসল বা চুলকানোর কারনে অনিচ্ছাকৃতভাবে মাথা, গোঁফ, দাড়ি বা শরীর থেকে কিছু চুল পড়ে গেলে কি হবে?
এতে হজ্জ বা উমরার কোন ক্ষতি হবে না। এমনকি নখের অংশবিশেষ পড়ে গেলেও সমস্যা নেই।
হজ্জের সময় বা ইহরামরত অবস্থায় যদি কেউ স্ত্রী সহবাস করে তবে এর হুকুম কি?
অধিকাংশ উলামাদের মতে হজ্জ বাতিল হয়ে যাবে স্বামী স্ত্রীর দু’জনেরই। সে সহবাস আরাফাতে অবস্থানের আগে হোক বা পরে হোক। আর হজ্জ বাতিল হয়ে গেলে পরবর্তী বছর এ হজ্জ কাযা করতে হবে।
ঠাণ্ডা লাগলে ইহরাম অবস্থায় গলায় মাফলার ব্যবহার করতে পারবে কি?
উঃ হ্যাঁ।
হারাম শরীফের সীমানা কতটুকু? মিনা ও মুযদালিফা হারামের ভিতরে না বাহিরে?
এ দু’টো এলাকা হারামের সীমানার ভিতরে অবস্থিত। অর্থাৎ হারামের অংশ। কিন্তু আরাফাতের ময়দান হারামের বাহিরে। হারামের সীমানা কাবা ঘর থেকে :
- পূর্ব দিকে ১৬ কিলোমিটার ‘জিরানা’ পর্যন্ত।
- পশ্চিম দিকে ‘হুদাইবিয়া (শুমাইছী)’ পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার।
- উত্তর দিকে ৬ কিলোমিটার ‘তানঈম’ পর্যন্ত।
- দক্ষিণ দিকে ১২ কিলোমিটার ‘আদাহ’ পর্যন্ত।
- উত্তর-পূর্ব কোণে ১৪ কিলোমিটার ‘ওয়াদী নাখলা’ পর্যন্ত।