সৌদি আরব মধ্যপ্রাচ্যের একটি প্রধান অর্থনৈতিক কেন্দ্র। প্রতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষ সেখানে কাজ করতে যান, বিশেষ করে বাংলাদেশ থেকে বিপুল সংখ্যক কর্মী সৌদি আরবে পাড়ি জমান। তবে অনেকেরই মনে প্রশ্ন থাকে — সৌদি আরবে কোন কাজের বেতন বেশি? এই প্রশ্নের উত্তর এক কথায় দেওয়া কঠিন হলেও, বিস্তারিত বিশ্লেষণ করলে আমরা বুঝতে পারি কোন খাতগুলো সবচেয়ে লাভজনক এবং কোন পেশায় বাংলাদেশিদের আয়ের সম্ভাবনা বেশি।

সৌদি আরবে কোন কাজের বেতন বেশি

সৌদি আরবে উচ্চ বেতনের চাকরি পেতে হলে পেশাগত দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিচে কিছু উল্লেখযোগ্য খাত তুলে ধরা হলো যেখানে বেতন তুলনামূলকভাবে বেশি:

  • চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবা: চিকিৎসক, নার্স এবং ফার্মাসিস্টদের জন্য সৌদি আরবে সুযোগ অনেক। বিশেষ করে অভিজ্ঞ ও লাইসেন্সপ্রাপ্ত চিকিৎসকরা প্রতি মাসে ১৫,০০০ থেকে ৪০,০০০ সৌদি রিয়াল পর্যন্ত আয় করতে পারেন। নার্সদের বেতন ৪,০০০ থেকে ১০,০০০ রিয়াল পর্যন্ত হয়ে থাকে।
  • প্রকৌশল ও নির্মাণ খাত: যেসব প্রকৌশলী (সিভিল, মেকানিক্যাল, ইলেকট্রিক্যাল ইত্যাদি) আন্তর্জাতিক সার্টিফিকেট বা অভিজ্ঞতা নিয়ে সৌদি আরবে যান, তাদের বেতন বেশ ভালো। সাইট ইঞ্জিনিয়ার, প্রজেক্ট ম্যানেজার এবং প্ল্যানিং ইঞ্জিনিয়ারদের বেতন ৭,০০০ থেকে ২৫,০০০ রিয়াল পর্যন্ত হতে পারে। এটি আবার কোম্পানি ও প্রজেক্টের ওপর নির্ভর করে।
  • আইটি ও সফটওয়্যার খাত: ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশনের ফলে সৌদি আরবে আইটি খাত দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, ডেটা অ্যানালিস্ট, সাইবার সিকিউরিটি এক্সপার্টদের জন্য সৌদি আরবে বিশাল চাহিদা রয়েছে। এদের বেতন সাধারণত ৮,০০০ থেকে ৩০,০০০ রিয়াল পর্যন্ত হতে পারে।
  • ব্যাংকিং ও ফাইনান্স: আন্তর্জাতিক ব্যাংক ও ফাইনান্স প্রতিষ্ঠানগুলোতে কাজ করার সুযোগ থাকলে বেতন বেশ ভালো হয়। অ্যাকাউন্ট ম্যানেজার, ফাইনান্স কনসালটেন্ট বা ইনভেস্টমেন্ট এক্সপার্টরা ১২,০০০ থেকে ৩৫,০০০ রিয়াল পর্যন্ত আয় করতে পারেন।
  • এভিয়েশন ও এয়ারপোর্ট সার্ভিস: পাইলট, এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার, এয়ারলাইন্স টেকনিক্যাল স্টাফদের জন্য সৌদি আরবে উচ্চ বেতন নির্ধারিত। এই পেশাগুলোর বেতন শুরু হয় ১৫,০০০ রিয়াল থেকে এবং অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে ৪০,০০০ রিয়াল বা তার বেশি হতে পারে।
  • হোটেল ম্যানেজমেন্ট ও হসপিটালিটি: বিশ্বখ্যাত হোটেল চেইনগুলো সৌদি আরবে কাজ করে, বিশেষ করে মক্কা ও মদিনায়। হোটেল ম্যানেজার, কিচেন সুপারভাইজার, হাউসকিপিং ইনচার্জদের বেতন ৬,০০০ থেকে ১৮,০০০ রিয়াল পর্যন্ত হতে পারে।
  • ড্রাইভার ও হেভি ভেহিকল অপারেটর: বাংলাদেশিদের মধ্যে এই পেশাটি খুবই জনপ্রিয়। প্রাইভেট ড্রাইভার, বাস চালক কিংবা ট্রেইলার চালকদের বেতন ৩,০০০ থেকে ৭,০০০ রিয়াল পর্যন্ত হয়ে থাকে। অভিজ্ঞতা এবং কোম্পানির মান অনুযায়ী এটি আরও বাড়তে পারে।
  • কারখানা ও নির্মাণ শ্রমিক: যদিও সাধারণ শ্রমিকদের বেতন তুলনামূলকভাবে কম, কিন্তু যারা কাজের অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতা নিয়ে যান, তাদের জন্য উচ্চ বেতনের সুযোগ থাকে। কারখানায় সুপারভাইজার বা টেকনিক্যাল স্টাফ হিসেবে কাজ করলে বেতন ৪,০০০ থেকে ৯,০০০ রিয়াল পর্যন্ত হতে পারে।
  ফিনল্যান্ড স্টুডেন্ট ভিসা ২০২৫

 

সৌদি আরবে ভালো বেতনের চাকরি পেতে প্রয়োজনীয় যোগ্যতা

আপনি যদি ভালো বেতনের সৌদি আরবে চাকরি করতে চান সে ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। আপনার যোগ্যতা এবং দক্ষতা যত ভালো হবে সৌদি আরবে আপনি তত ভাল বেতনে চাকরি করতে পারবেন। যে সকল যোগ্যতা অর্জন করলে ভালো বেতনের চাকরি করা যায় এবং চাকরির ক্ষেত্রে প্রমোশন পাওয়া যায় সেগুলো নিচে তুলে ধরা হলো।
  • উচ্চ শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকা প্রয়োজন: ভালো বেতনের চাকরির জন্য অন্তত ব্যাচেলর ডিগ্রি থাকা দরকার। ইঞ্জিনিয়ারিং, মেডিকেল, আইটি, বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ইত্যাদি ফিল্ডে ডিগ্রিধারীরা অগ্রাধিকার পায়।
  • কারিগরি দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা থাকা উচিত: যেসব কাজের জন্য হাতেকলমে কাজের অভিজ্ঞতা দরকার, সেখানে ৩-৫ বছরের অভিজ্ঞতা থাকলে ভালো বেতন পাওয়া যায়। যেমন HVAC, ইলেকট্রিশিয়ান, মেকানিক, ওয়েল্ডার, প্লাম্বার প্রভৃতি।
  • ইংরেজি ও আরবি ভাষায় দক্ষতা থাকা ভালো: ইংরেজি ভাষায় কথা বলা ও লেখার দক্ষতা থাকলে মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে কাজ পাওয়া সহজ হয়। আরবি ভাষা জানলে স্থানীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ সহজ হয় এবং বেতনও বাড়ার সম্ভাবনা থাকে।
  • আন্তর্জাতিক সার্টিফিকেশন থাকলে বাড়তি সুবিধা: বিভিন্ন প্রফেশনে যেমন আইটি, একাউন্টিং, মেডিকেল বা প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্টে আন্তর্জাতিক স্বীকৃত সার্টিফিকেট থাকলে ভালো পজিশনে চাকরি পাওয়া যায়। যেমন PMP, CCNA, CMA, HAAD ইত্যাদি।
  • সঠিক ও আপডেটেড ডকুমেন্টেশন থাকা আবশ্যক: পাসপোর্ট, শিক্ষাগত সনদ, অভিজ্ঞতার সনদ, মেডিকেল রিপোর্ট ও পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সঠিকভাবে প্রস্তুত রাখা জরুরি। এগুলো না থাকলে চাকরিতে যোগ দেওয়া বিলম্ব হতে পারে।
  • পেশাভিত্তিক ভিসা বা ইকামা প্রয়োজন: সৌদি আরবে কাজ করতে হলে স্পন্সর কোম্পানি থেকে নির্দিষ্ট পেশার জন্য ভিসা এবং পরে ইকামা (রেসিডেন্ট পারমিট) পাওয়া লাগে। পেশা অনুযায়ী ভিসা না হলে সমস্যা হতে পারে।
  • বিশ্বস্ত রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে আবেদন করা উচিত: বাংলাদেশ থেকে বিএমইটি অনুমোদিত এজেন্সির মাধ্যমে চাকরিতে আবেদন করলে প্রতারণার সম্ভাবনা কম থাকে এবং প্রয়োজনীয় সহযোগিতাও পাওয়া যায়।
  • চাকরির জন্য প্রস্তুতিমূলক কোর্স বা ট্রেনিং গ্রহণ করা উপকারী: কিছু ক্ষেত্রে চাকরির জন্য প্রয়োজনীয় স্কিল বাড়াতে ট্রেনিং নেয়া দরকার হয়। যেমন কম্পিউটার স্কিল, প্রফেশনাল ইমেইল রাইটিং, ইন্টারভিউ প্রস্তুতি ইত্যাদি।
  • চাহিদাসম্পন্ন পেশার প্রতি লক্ষ্য রাখা ভালো: যেসব পেশার চাহিদা সৌদি আরবে বেশি, যেমন ডাক্তার, নার্স, ইঞ্জিনিয়ার, আইটি বিশেষজ্ঞ, হোটেল ম্যানেজার, ড্রাইভার—এসব ক্ষেত্রে চেষ্টা করলে ভালো বেতনের চাকরি পাওয়া সহজ হয়।
  প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন নিয়ম ২০২৫

সৌদি আরবের বিভিন্ন কাজ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে যোগাযোগ করুন

সৌদি আরবে কোন কাজের বেতন বেশি এবং কোন কাজ আপনার জন্য পারফেক্ট সে সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে ফ্লাইওয়ে ট্রাভেলের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। সৌদি আরবে ট্রাভেলের নিজস্ব অফিস রয়েছে।

যোগাযোগ:

উপসংহার

সৌদি আরবে কোন কাজের বেতন বেশি তা নির্ভর করে পেশা, দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতার ওপর। চিকিৎসা, আইটি, ইঞ্জিনিয়ারিং, ব্যাংকিং এবং এভিয়েশন খাতগুলোতে বেতন সাধারণত সবচেয়ে বেশি। তবে যেকোনো খাতে সফল হতে হলে দক্ষতা ও সঠিক নিয়োগ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিদেশ যাত্রা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই লক্ষ্যে Flyway Travel-এর মতো নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান বেছে নেওয়াই হবে আপনার সফলতার প্রথম ধাপ।